তিনটি মুক্তগদ্য । ইমন দত্ত

ইমন দত্ত। আধুনিক রূপের কবিতা স্রষ্টা। আক্ষরিক অর্থেই তিনি মুক্তাক্ষর এর আধুনিক পাখি। তার লেখা তিনটি মুক্তগদ্য রইল।


১.
মাটি

ইমন দত্ত


দুই তিনবার মাটি খুড়তেই ঘোলাটে জলের মতন কিছু কাগজ খুঁজে পেলাম, যার গায়ে ছিল তাজা মানুষের রক্ত ও দুইধারে ছিবড়ে হয়ে যাওয়া সংবিধানের চিহ্ন।  যদিও এক ক্ষতবিক্ষত লাশের সন্ধান নিয়েই মাটিখোড়াটা শুরু করেছিলাম, কিন্তু অবশেষে যা হাতে আসলো তা কম কিছু নয়!
তাদের ফাঁসির সাজা হয়েছিল, আর কিছুজনের হয়েছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। কিন্তু তাঁরা এখন রঙিন চাদর গায়ে পেচিয়ে ঘুরেবেড়াচ্ছা ,তদন্তের আগেই নাকি তাঁরা নিখোঁজ ছিল।খোঁজ করে দেখা গেল সেই ধর্ষিতা মৃত, তাই তাকে খোঁজার জন্যই হাতে কোদাল নিয়ে বেড়িয়ে পোরলাম।সত্য অন্বেষণ করতে গিয়ে সন্ধ্যা বেলায় পেলাম আসল সন্ধান। অবশেষে বুঝলাম সমস্ত আইন, সমস্ত বিধান এখন মাটির নিচে ঘুমোচ্ছে, আর তাদের কাফন পড়িয়ে দিচ্ছে শোষণের আঁচল আর পাজামার দড়ি বেধে দিচ্ছে দুই হাত।



২.
দূর বহুদূর

ইমন দত্ত


পালাতে পালাতে এতদূর আসলাম, যে এখনে সূর্যের নিঃশ্বাসে দেহ ডুবে যায়! অন্ধকারও কাছে আসতে ভয় পায়!কোনো রঙ নেই এখানে!
ভাবলুম চিতার কাঠে হয়ত আরাম নিচ্ছি, বরাবরই মৃতদেহ হবার এক উচ্চ আকাঙ্ক্ষা ছিল, কারণ আগুন বা মাটি আমাকে স্পর্শের জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকবে। এতটাই নোংরা ছিলাম যে সব জামাকাপড় খুলে দিতে হল। 
এখন আমার বয়স বলে আর কিছু নেই! আমি নতুনও নই,পুরাতনও নই। শুধু মনে হয় একটা ছায়া, যা অন্যের উপস্থিতির উপর দৃশ্যমান হয়। এটা কিন্তু সংকট না এটা হল সৃষ্টি, যার পায়ের শেষ ছাঁপেই পৃথিবীতে অন্তত আগুন জ্বলেছিল!



৩.
নির্বাক

ইমন দত্ত


নির্বাক থাকলে ভিতরে এক ডিকশনারি তৈরি হয়। 
প্রচুর শব্দ জমে থাকে, তারপর গ্রামার বই জোগাড় করে আস্তে আস্তে বাক্য তৈরি করে ফেলি,কিন্তু সবটাই ওই ভিতরে ভিতরে।
আমি মনে করি, যারা চোখ পড়তে পারেনা তাঁরা হৃদয়ের ভাষা কেমনে বুঝবে?? তাই চুপ করেই থাকি। 
ভেতর ভেতর তৈরি হয় প্রচুর বই,দাম পাওয়া যায়না ঠিকই কিন্তু মূল্য বাড়ে। ওটাই ভালো, কাওকে গলা খুলে কিছু বোঝাবার নেই!বলারও নেই!শুধু অন্তার্যামী জানে, ওতেই হবে। 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ