আজ বিশ্ব কবিতা দিবস। মুক্তাক্ষর সাহিত্য স্রোত পরিবারের সকলকে জানাই এই দিনটির বিশেষ শুভেচ্ছা। আপনাদের কলম ধারালো হয়ে উঠুক আরো। কবিতায় কবিতায় ভরে উঠুক এই মিলন মহোৎসব। অক্ষরে অক্ষরে যাপন হোক প্রতিটা দিন।
- মুক্তাক্ষর নিবেদন করছে একটি কবিতার মায়াজাল। জলঙ্গী ।
কবিতা
১.
পত্রিকার রোজনামচা
দেবাশীষ অধিকারী
শুধু কেচ্ছার পাঁচালী,
আর ভাগাড়ের পচা গলা দেহ নিয়ে
কাদাখচা সংবাদপত্রগুলো এখনও বিক্রি হয়।
আমিও কিনি, ভালো লাগেনা তবুও পড়ি,
ঠিক পড়ি..না,পুরনো অভ্যেসে চোখের সামনে ধরি।
কালকের দৈনিক পত্রিকায় কি কি থাকবে
সেটা একেবারে একের ঘরের নামতার মত
গরগর করে আজই বলা যায়।
আর কিছু থাক বা না থাক, রিভলভারের ছোট্ট দানায় রক্তাক্ত ছবি,লাশের মালিকানা নিয়ে দুই দলের কাড়াকাড়ি,ভদ্রতার মোড়কে বিলাসী বাবুদের তরল উষ্ণতায় জঙ্গলে নবজাতকের তুলতুলে মাংসপিণ্ড,
ফুটপাতে পড়ে থাকা পাগলিটার হঠাৎ পেট ভারী,
হয় মসজিদে শুকরের মাংস
নয়তো মন্দিরে গরুর ঠ্যাং
সেই নিয়ে ঈশ্বর আল্লাহ রনংদেহি।
গুজরাটে যাত্রীসহ ট্রেন দাউ-দাউ করে জ্বলে,
গর্ভবতী আমিনার ভ্রূণ ছিটকে বের হয়।
আর হায়দ্রাবাদে প্রকাশ্য দিবালোকে
অষ্টম শ্রেণীর দুর্গার যোনি ছিড়ে রক্ত গঙ্গা বয়
ভেজাল মদে বা অন্তর্দলীয় কোন্দলে
মৃতের পরিবারের হাতে দু লাখের চেক,
পরিবার কিছু একজনের চাকরি,
বাড়ি ঘর জ্বলে গেলে আরও পাঁচ লাখ।
হেলিপ্যাডে ভেসে এসে মন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির মাইলস্টোন,
মন্ত্রী নামের বিশেষ জীব এবং হেলিপ্যাড দেখতে ঝাঁকে-ঝাঁকে গ্রামবাসীর ময়দানে ছুট,
ক্ষমতাসীন দলের বিশ্বস্ত রিপোর্টার পনেরো লক্ষ মাথার ছবি দেখিয়ে মন্ত্রীর জনপ্রিয়তার বিজ্ঞাপন।
চিট ফান্ডে জড়িত নেতাকে ধরতে দিল্লির আকাশ থেকে একশ আশি কিমি বেগে ছুটে এসে মেঘেদের শুধু শূন্য কলসির মত গর্জন।
দু একটি বেয়াদব মিডিয়ার জীর্ণ কলেবর
অস্ট্রেলিয়ান স্কচে মোদির হয়ে লক্ষ টাকায় বেশ্যার এক একটি রাত কেনার ছবি ফাঁস করে
অকাল মৃত্যু ডেকে নেয়।
ছোটখাটো কিছু খবর আনাচে-কানাচে শূন্যস্থান পূরণ করে
রোজ রোজ এই একই বস্তাপচা খবর কার ভালো লাগে বলুন?
তবুও আমরা কিনি,কারণ দৈনিক সংবাদপত্রের হেডলাইনের পাশেই বলা থাকে - আমরাএগিয়ে থাকি, এগিয়ে রাখি।
২.
কথোপকথন -১
লুবনা জাহান
"সন্ধ্যারা বেশ আয়োজন করে
নেমে পরেছে মন পাড়ায়
এ আয়োজনে ছিল পাখিরা,
আর সন্ধ্যার শ্রাবণ গন্ধ।
জানালার ফাঁকে দূরের বৃষ্টিতে
হাত ধরার আকুতিতে ছুটে যাই
কৈশোর প্রেমে...... "
"বুকের তিমির ভেঙে দেখা হয়েছিল দু'জনার।
যেখানে অঘোনের পূর্ণ চাঁদ
ছড়ায়নি জোৎস্নার।
তোমার সেই কৈশোরের প্রেম
জলের আরশিতে দেখা স্বপ্ন.... "
৩.
পরিহাস
সুনয়ন
গাছ থেকে পাতা ঝরা দেখছিল কেশব
মনে মনে ভীষণ খুশি গাছটির অবস্থা দেখে
একসময় তারও মাথাতে প্রচুর চুল ছিল
আজ তা গড়ের মাঠ
অতঃপর বসন্ত এলো
এখন গাছটিও কেশবকে নিয়ে মশকরা করে
৪.
তোমার জন্যে
অভি বিশ্বাস
আমি নাহয় ভ্রমর হব,
ফুটবে তুমি ফুল হয়ে!
সব মধুরস ফুরিয়ে গেলেও,
থাকব বসে গা জড়িয়ে।
আমি নাহয় জোনাক হব,
আলো দেব আঁধার রাতে।
দুঃস্বপ্ন তোমায় ছুলেও,
থাকব জেনো তোমার সাথে।
আমি নাহয় নদীই হব,
ভাসবে তুমি নাও হয়ে,
যদিও আসে সামান্য ঢেউ,
আগলে নেব হারানোর ভয়ে!
আমি নাহয় মেঘ হব,
আকাশঘরে থাকব শুয়ে,
ঘোর শ্রাবণের আস্কারাতে,
ছোঁব তোমায় বৃষ্টি হয়ে!
৫.
এক মুঠো হাওয়া
ইতি দাস
কাঞ্চনজঙ্ঘার সোনালি আদরে
উশখুশ চোখের পাতা আড়মোড়া ভাঙে
ক্লান্ত চোখ সিঁড়ি বেয়ে
শৃঙ্গ ছুঁতে চায় যখন তখন
স্পষ্ট হয় সাগরতীরে বাতিঘর।
ঘুমহীন স্বপ্ন চোষে ঘুমের বড়ি
চাঁদোয়ার ঠান্ডা বাতাস পেয়ে
মন ভোলে চুলচেরা প্রতিযোগিতা
পালের সাথে বয়ে চলে হাওয়া।
কাঁটা কম্পাসে মেপে চলা নিরর্থক
ছকে আঁটা গুটি ছকেই পড়ে মরে,
বৃত্তের বাইরে পরিধি অফুরান অসীম।
লুটে নেওয়া যায় অগুনতি রাজকোষ
উজাড় করা যায় নিঃশেষটুকু
সঙ্গী শুধু মাস্তুলের প্রেমে পড়া ।
৬.
কিছু বলার ছিল
জয়া বসাক
জীবনে আবারও একবার হারিয়ে ফেললাম মনে হয় তোমাকে !
কিন্তু,মনের মন্দিরে থাকবে চিরতরে।
অপেক্ষা করবো আমি....সেই দিনটার,
তুমি কি করতে পারবে!!
দেখা হবে, কথা হবে আবার এক কোনো দিন।
আমি তো সেই দিনটার জন্য করছি অপেক্ষা,
তুমি কি অপেক্ষা করতে পারবে!!
জানিনা ,মনে তখন আমায় থাকবে কি- না,
তখন হয়তো ভুলেই যাবে আমাকে।
বলবে ,ঠিক চিনতে পারলাম না যে!!
কিন্তু,নিজের লক্ষ্য কে স্থির রেখে,আমি
অপেক্ষা করে যাবো...!!
তুমি কি পারবে??
বলো না,, তুমি কি পারবে!
৭.
হাসনুহানার ঘোরে
সৌম্যদ্বীপ সাহা
ভিড়, চেয়ে দেখো চারিদিকে কত ভিড়;
আরো শক্ত করে, আরও দৃঢ় বাঁধে
ধরে রাখো আমার হাত দুখানি।
নাহ! নাহ! আমাকে ধরে রাখতে বলো না।
দেখো, এই পথের দুধারে কত মন-ভোলানো দোকান বসেছে সাজিয়ে নিয়ে;
আকর্ষণ যেন হয় তীব্র হাসনুহানার মত।
হ্যাঁ এভাবেই, ধরে রাখো হাতটা;
দোকানগুলোর উজ্জ্বলতা যদিবা
চোখ দিয়ে মনে গিয়ে বসে,
যদিবা তোমার কোমল হাতটা
কোমল ভাবে ছেড়ে দেই পথের মাঝেই;
তবে, তবে কি হবে বলত?
এই মেলা অস্থায়ী,
দোকানগুলো একদিন উঠে যাবে,
দেহের চারিপাশে ভিড় হবে শূন্য।
হ্যাঁ, হ্যাঁ দুটো হাতই ধরে নাও আমার।
নিয়ে চলো আমায়
ভিড় মাখা এই পথ দিয়ে,
ভিড়গুলো সরিয়ে।।
৮.
ফিরবে না আর
অরুণাভ জীবন দত্ত
অপেক্ষা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছি,
কেউ আর ডেকো না।
জীবনের সামান্য জিজ্ঞাসায়,
চাওয়া...না পাওয়ায় ঢেকেছে হৃৎপিণ্ড।
স্বপ্ন ডাক দিলে হয়তো জেগে উঠবো,
তবে! ফিরবো না আর কোনদিন।
৯.
শুধু কবিতার জন্য
অভিষেক দাস
শুধু কবিতার জন্য
এক হিমশীতল সন্ধ্যে পেরিয়ে আসা,
শুধু কবিতার জন্য
নিঃসঙ্গ জীবনে কাগজ কলম ভালোবাসা।
শুধু কবিতার জন্য
উম্মত্তের মতো কবিতার ছন্দমিল খুঁজি
শুধু কবিতার জন্য
জীবন পাতার ক্লোরোফিল বলতে কাব্য বুঝি।
শুধু কবিতার জন্য
অগোছালো চুলে কতো প্রেমিক অপেক্ষারত,
শুধু কবিতার জন্য
পাগল প্রলাপ বলে চলেছি অজস্র অজস্র যত।।
১০.
হলদে তারার রূপকথা
তপতী নন্দী
হলদে তারার রূপকথা,
উল দিয়ে বুনছে দেখো নকশি কাঁথার কথা।
কলমের ছোবলে রক্তাক্ত হয়েছে খাতার পাতা,
দক্ষিনা হাওয়া বিছিয়ে যায় সেথায় পথের কাঁটা।
একটা রাত খুঁজে চলেছে হন্য হয়ে একটা দিন,
পায়না শুধু ভেসে আসে শূন্যে একটা আওয়াজ খুব ক্ষীণ...
তারপর সেই আওয়াজটাও আরেকটু মৃণাল হয়ে আসে...
পথের ওই বাঁকে কেউ থাকেনা,
শুধু একটা নিঝুম অন্ধকার আর একটা রাত্রি কাঁদে ত্রাসে।
১১.
ইচ্ছে নদী
সুরাবুদ্দিন সেখ (সোহরাব)
ইচ্ছেগুলো ভাসিয়ে দিলাম ইচ্ছে নদীর নিরে
ভাসতে ভাসতে চলে যাও আর এসো না ফিরে,
উঠবে যেদিন ঐ তীরেতে হবে ইচ্ছা পূরণ
তোমার বুকে ভাসতে ভাসতে হয় যে কিছুর মরণ।
হাজার রকম ইচ্ছেগুলো ভাসছে আমার তরে
ভাসার ছবি ভেসে ওঠে আমার মনের ঘরে,
কিছু কিছু ইচ্ছেগুলোর ভাসার কত গতি
উঠবে যেদিন ঐ পাড়েতে জীবন হবে মতি।
কিছু ইচ্ছে ধীর গতিতে জলের তলে ডোবে
ফিরবে না হায় আর কভুও আমার জীবন ভবে,
আশায় আমি বসে আছি সবার পানে চেয়ে
খুব গতিতে পূরণ করো বিজয়গীতি গেয়ে।
১১.
প্রতিশ্রুতি
জয়া মাহাতো
বাতাসে বারুদের গন্ধ
মেয়েটির মন আজ বড়ই অস্থির
কথা দিয়েছিল ছেলেটি
আসবে বলে
সকাল গড়িয়ে দুপুর এল
দুপুর পেরিয়ে রাত
কই... এল না তো সে?
ক্লান্ত চোখে স্বপ্নের আবেশ
চমকে উঠে মন
দরজায় মৃদু ধাক্কা
এল বুঝি?
দুয়ার প্রান্তে দাঁড়িয়ে দেখে
শুধু সে নয়
সঙ্গে তাঁর রয়েছে অনেকেই
সর্বাঙ্গ সাদা কাপড়ে ঢাকা
এই কি তাঁর প্রতিশ্রুতি...??
১২.
মৃতের সভ্যতা
অনির্বাণ চক্রবর্তী
মন খারাপের দিনে আকাশ ভরা ভাবনায়
পড়বে এবার ছেদ...,
রঙিন জলের নেশায় আসবে হঠাৎই খবর..
জ্বলন্ত সিগারেটের সুখটানে নিকোটিনের নেশায়
ছাই জমবে খালি গ্লাসে...,
প্রাক্তন প্রেমের নেশায় মেপেছো।
ফুরিয়ে যাওয়া দিন গুলো ,
তুমি ভাবো তোমার আয়ু রেখা হারিয়ে পথ..
আমি দেখি তোমার চলে যাবার চরা পথ..
পথ মাপে যমদূত ,ফিরে আসে সুখ পাখি..
মোহনায় ফের ত নৌকায় আবারো ভাসে বেঁচে ফেরার গান..
পুরনো প্রেমিক মেতেছে মৃত সভ্যতার গানে,
নেশাতুর চোখে তুমি ভাবো আমায়,
মৃতের শহরে আমি হঠাৎ..
ধোয়া মাখা ধোঁয়াশাই হারিয়েছি পথ..,
কারা যেন বলে ওঠে বারবার,
আসবে মৃত সভ্যতায় ...।।
১৩.
বন্ধুত্ব
অজয় মণ্ডল
দুটি নক্ষত্র আলো জ্বলে টিপ টিপ
তোমরা ধর্ষণকারী এক বারোও
ছুঁয়োনা হাত দিয়ে।।।
অভিশপ্ত হয়তো তোমাদের চোখ
তাকিয়ে দেখি হাসো ঘৃণা করো...
তবুও আমরা দুটি কলিকালের ধুমকেতু
এক্সপ্রেস এক অপরের প্রতি অগাধ বিশ্বাস
বসন্তের সূর্যের আলোর প্রতিফলন যেভাবে
আকাশ মাটির বন্ধু।।
হাওয়ার মতোই আমরা
গা ভাসিয়ে নিয়ে আলোর
পথ হাতরাই!!
১৪.
বসন্তের ভালোবাসা
তানিয়া কুন্ডু
শীতের শেষে আগমনে বসন্ত সুধা
দিনশেষে স্বপ্ন ছেপেছে বুকে গাঁথা
ভালোবাসার সুর শিউরে ঘনাচ্ছে চারিদিকে
নিক্ষিপ্ত মন ভরেছে ফুলের বাহারে
লাল রঙে মেতেছে কৃষ্ণচূড়া
আনন্দ আজ ছড়িয়েছে সারা বাংলা
জানিনা আমি কোনো দ্বিধা লেখার আভাসে তুলেছি বসন্তের ভালোবাসা
রাস্তার কোনায় লেগেছে আবিরের ছটা
মিঠে রোদের স্নিগ্ধ বাহারে।।
প্রকৃতি সজ্জিত হয়েছে আবিরের সমাবেশে
রচিত স্বপ্ন পুর্নিত হয়েছে মানবজীবনে
পূর্ণিমার আলো জাগ্ৰিত হয়েছে পূর্ণচন্দ্রে
আকাশরুদ্ধ কালো মেঘ কেটেছে বসন্তের গন্ধে
মানবমুখের চিত্রিত ছাপ সরেছে নিমেষে
শাড়ি - পাঞ্জাবির সজ্জা চিত্রিত হয়েছে নানান রূপে
প্রেমিক - প্রেমিকার গালে স্পর্শিত রং মাখা হাত
নাচগানে মেতেছে পুরো বাংলা মিষ্টিময় বসন্তে
ভাঙ্গা পথ হয়েছে মসৃণ বসন্তের মলিনতায়
গাছের সবুজ পাতায় লেগেছে আবিরের ভালোবাসা ।।
১৫.
বলা হলো না
ডঃ অশোকা রায়
তুমি আমাকে সংযত থাকতে বলেছ,
দূরের থেকে বয়ে যাওয়া গঙ্গার মতো আমার তৃষ্ণা বাড়িয়েছ...
কাস্তে চাঁদের আলোয় ম্রিয়মান হয়েছি,
জ্যোৎস্নার জন্য ছটফট করেছি
বারবার বলেছি,তুমি আমায় পদ্মপাতার জল হতে দিও না,
আমি তো তাহলে শিশিরের ফোঁটা হয়ে টুপ করে ঝরে যাব বেলাশেষের রোদ্দুরটা ঘন হলে।
তুমি বুঝতেই
পারোনি,
বিকেলের উদাস আলোয় আমি ঘুমিয়ে আছি তোমার বুকের ভেতরে..
নগ্ন পায়ে ঘুরেছি তোমার চারপাশে সেই স্থবির কাল থেকে
তর্জনীতে তোমার বরাবরই অনুশাসন,
অথচ ভাবের শরীরে তোমার বাউলের দেহজ কীর্তনের আকর্ষণ;
ভাবের ঘর তোমার তালাবন্ধ।আমার বারান্দার মেঝে জুড়ে চিরকাল তাই শীতের শীতলতা.
অচেনা উষ্ণতার জন্য হয়েছি অধীর ,
ভাগশেষ শূন্য হওয়ার অপেক্ষা বেড়েছে..
শালপাতা
উড়েছে নিয়ে কাটাকুটি খেলার গোল্লা।
গোল্লা ছুটের খেলায় হেরেছি।
বিলায়েতের সেতারে তখন শেষের পর অবশেষের ঝালা।
আজ আর খুঁজি না তোমাকে,
জানি তুমি আমি দুজনেই আছি একই আলোক বর্ষে,
চেনা নক্ষত্রদের সাথে,
তবু মেলামেশা আমাদের হল না ।
বলা হল না তোমাকে আমার কথা,যা চেয়েছিলাম কোন একদিন বলতে তোমাকে একান্তে।
শুধু সফেন সমুদ্র কে বলি চুপিচুপি,
আমায় একটু আশ্রয় দেবে?
১৬.
আজানা প্রশ্ন
নয়ন কর্মকার
রয়েছে কিছু প্রশ্ন?
যা করছে খেলা আমার মস্তিষ্কে।
মানুষ কেনই বা আসে এই ভুবনে?
কেনই বা সহ্য করে সাংসারিক ব্যাথা বেদনা?
প্রশ্নগুলি এসে টুকি মারে আমার মস্তিষ্কে।
কেনই বা ভিক্ষুকেরা থাকে বেঁচে,
আর সম্পদশালী ব্যাক্তি দেয় প্রাণ বিসর্জন।
তবে কী অর্থনৈতিক সুখ সব নয়?
তবে অর্থ ছাড়া জীবনতো অন্ধকারময় ।
কেনই বা মানুষের জীবনে রয়েছে সুখ,
আর রয়েছে দুঃখ।
কেনই বা মানুষ মানুষকে করে হিংসা, ঘৃণা ,বিদ্বেষ।
১৭.
বসন্ত এসে গেছে...
সত্যব্রত ধর
উত্তরের হাওয়া বরাবরই খামখেয়ালি আপনভোলা। শীতের খসখসে রুক্ষতা শেষে
গরমের তাৎক্ষণিক চাকচিক্য প্রকাশ পেলেও,
কুয়াশার সাময়িক ফিরিস্তি জানান দেয়
শীতের ইনিংস পুরোপুরি শেষ হয়নি।
আর দক্ষিণের আবহাওয়া ভীষণ চড়া,
রঙবেরঙের দামী জৌলুসে মোড়ানো।
ঐ ছদ্মবেশী হাওয়ার পাল কখন যে
কোনদিকে বয় তা বোঝা বড্ড শক্ত।
দক্ষিণের হাওয়ায় গোছানো আগ্রাসী দম্ভ থাকলে
উত্তরের হাওয়ায় আছে প্রাকৃতিক মিশুকে মায়া,
দক্ষিণের হাওয়ায় শহুরে রূপের তেজ থাকলে
উত্তরের হাওয়ায় আছে বড্ড আপন ভাব।
তবে উত্তর আর দক্ষিণের এসব ভিন্নতা
পেরিয়ে, দু-এর মেলবন্ধনে বঙ্গের বাতাসে
এখন আনন্দের পলাশ ও মহুয়ার সৌরভ
জানান দিচ্ছে..."বসন্ত এসে গেছে"!
১৮.
মানুষ
সৌম্যদ্বীপ দাস
ঘুম থেকে উঠে কি চাও,
মুক্তি, প্রেমিকা নাকি শৈশব?
ঠোঁটের উপরে কালো রেখা
আমরা কাটাকুটি খেলিনি অনেকদিন যাবৎ
স্বপ্নে হটাত ভেসে উঠলে
আমি মানুষের কান্না অনুভব করতে পারছি
মানুষ আমাকে ডাকছে,
আমি ওদের ভেতরে যাবার চেষ্টা করছি
আমি অনুভব করতে পারছি,
একটা নিরীহ জাত মুক্ত হতে চায়
ছোটবেলায় দেখেছি তোমাদের
এখন কোথায় যাচ্ছি বারবার হোচট খাওয়ার পর?
মুক্তগদ্য
১.
অতিরিক্ত আহার
ইমন দত্ত
সবসময় এতো আনন্দে নাচতে ভালোলাগেনা, উৎসব আর আয়োজন বরাবরই আমার অতিরিক্ত আহারের মতন লাগে,দরকার নেই! শুধু যেন চোখের লালসায় গোগ্রাসে গিলতে হবে। বমি করে যখন গলাটা চিড়ে যায়, তখন কিন্তু বোঝা যায় যে বাড়ির দেওয়াল ভাঙলে আস্তানা কই পাবো??। এই আপেক্ষিক প্রহ্লাদ নিয়ে তাই জাঁকজমক জামাকাপড় পরিনা,লুকিয়ে থাকাই ভালো!দূরে থাকাই ভালো! কাছে না গেলে,দূরে যাওয়ার যন্ত্রনাটাও মাথার চুল ছিড়ে সন্যাস নেয়না! তারচেয়ে বরং একলা চলা বা অলৌকিক অজুহাতের নাম করে ঘুমিয়ে থাকা বা কোনো কবিতার গ্রামে গিয়ে ঝিঝিপোকার ডাক আর জোনাকির আলোয় দূর থেকে শহরের আতসবাজি দেখাটাই শ্রেষ্ঠ মনে হয়। দূরে থেকেও কাছে, কারণ কিলোমিটার আলাদা করলেও উচ্চতা কিন্তু এক করেছে।
২.
অভাব
শুভ্র সরকার
বাবা ভালো আঁকতে পারতেন। তিনি কাঠের সরোদ
এঁকে দিলে আমরা সবাই মিলে গান শুনতাম।প্রতিবার ঈদে বাবা আমায় জামা এঁকে দিতেন। আমি সারাদিন সেই জামা গায়ে দিয়ে শহরে ঘুরতাম। ক্লান্ত আমার ক্ষুধা লাগলে, ঘুমের ভিতর মা কাঁসার থালা এনে রাখতেন—বাবা
আঁকার খাতায় মেলে ধরতেন ধানক্ষেত। দু চোখকে উনুন বানিয়ে মা ভাত বসালে বাবা শুকনো কাঠে আঁকতেন আগুন। আর চিতায় পুড়ে যেত মায়ের প্রসববেদনা।
এরপর থেকে ক্ষুধা লাগলে বলতাম—বাবা, একটা ক্ষুধা আঁকুন। বাবা আমায় মায়ের মুখ এঁকে
দিতেন।
0 মন্তব্যসমূহ